মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে “নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম” এ প্রকল্পের আওতায় ২০০৬ সালে “ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরী’ প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর এর ধারাবাহিকতায় এ প্রকল্পের আওতায় ৮টি বিভাগীয় শহরে ৮টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিভাগীয় ডিএনএ স্ক্রীনিং ল্যাবরেটরী প্রতিষ্ঠিত হয়। এই প্রকল্পের চতুর্থ পর্বের বর্ধিত মেয়াদ আগামী ৩০ শে জুন, ২০২২ তারিখে সমাপ্ত হবে। উল্লেখ্য, মহান জাতীয় সংসদে ২২ শে সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে ডিঅক্সি রাইবোনিউক্লিক এসিড আইন, ২০১৪ পাশ হয়। এই আইনের ১৪(১) ধারায় উল্লেখ আছে, “এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এক বা একাধিক ডিএনএ ল্যাবরেটরী প্রতিষ্ঠা করিতে পারিবে এবং ১৪(৩) ধারায় উল্লেখ আছে, “ঢাকায় অবস্থিত ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরী এই আইনের অধীনে সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে গত ০৯/০৮/২০২০ খ্রি: তারিখে ডিএনএ ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ডিএনএ ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর বেইলি রোডের জাতীয় মহিলা সংস্থার সপ্তম তলায় ভাড়াকৃত দুটি রুমে কার্যক্রম শুরু করেছে। বর্তমানে মাল্টিসেক্টরাল প্রকল্পের অধীনে ঢাকা মেডিকেলস্থ ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরীসহ দেশের ৮টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিএনএ পরীক্ষার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রকল্পের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) তে সেবা গ্রহণকারী ধর্ষিতা, ভিকটিমসহ সংশ্লিষ্ট আসামিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় আসামী শনাক্তকরণের পাশাপাশি পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব নির্ণয়, অভিবাসন, টিস্যু ট্রান্সপ্লান্ট, অগ্নিদগ্ধ ও ভবনধ্বস এর মত জাতীয় বিপর্যয়ে সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে এই ডিএনএ ল্যাবরেটরীসমূহের কার্যক্রম মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর অধীনে ন্যস্ত করা হয়। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাকান্ড, “রানা প্লাজা” ও “তাজরীন ফ্যাশনের” মত অনাকাঙ্খিত দুঃখজনক ঘটনায় নিহতদের মৃতদেহ ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরী থেকে শনাক্ত করা হয়।
বিভিন্ন ঘৃণ্যতম অপরাধ যেমন ধর্ষণ, হত্যা ইত্যাদি দমনে এই ল্যাবরেটরীর মাধ্যমে পুলিশ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা প্রদান করা হয়। এছাড়া ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পিতৃত্ব অথবা মাতৃত্বের প্রমাণ, বিদেশে অভিবাসী গ্রহণেচ্ছুকদের প্রয়োজনীয় ডিএনএ পরীক্ষা, বংশের ধারা প্রমাণ, বিভিন্ন দুর্যোগে ও দুর্ঘটনায় নিখোঁজ এবং মৃত ব্যক্তির পরিচিতি উদঘাটনসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা হয়।
মাল্টিসেক্টরাল প্রকল্পের অধীনে শুরু থেকে অদ্যাবধি মোট ৭,৪১০ টি মামলার বিপরীতে ২৩,৫৩৩ টি নমুনার ডিএনএ প্রোফাইলিং করে দেশের বিচার প্রক্রিয়ায় ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এ পর্যন্ত ল্যাবরেটরীর মাধ্যমে ডিএনএ পরীক্ষার ফি বাবদ আনুমানিক ৪ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে।